উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীতের গবেষক
সালাউদ্দিন আহমেদ ১৯৬০ সালের ২৩ মে জন্ম নেয়া এই গবেষক ৪০ বছর ধরে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীতের চর্চা করে আসছেন। আছে বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবেশনা ও প্রশিক্ষণ দানের অভিজ্ঞতা। তিনি বেতার ও টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেণীভুক্ত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক। দেশের শীর্ষস্থানীয় সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন। তার পিতা মানিক উদ্দিন আহমেদ, মাতা হাদেসা খাতুন।১৯৭৪ সালে পিতার কাছে হাতেখড়ি। তারপর শ্রী নির্মলেন্দু বিশ্বাসের কাছে শিক্ষা গ্রহণ, অতঃপর ভারতের প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতগুণী উস্তাদ এ. দাউদ সাহেবের কাছে ১৯৭৮ সাল থেকে তালিম গ্রহণ, সেই সাথে ১৯৮৫ সাল থেকে কলকাতার প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীতগুরু পণ্ডিত সুকুমার মিত্র মহাশয়ের কাছে নজরুল সঙ্গীত, ভজন, ঠুমরী ও গজলের তালিম গ্রহণ।
১৯৮৯ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারে নজরুল সঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করে আসছেন, বর্তমানে বিশেষ শ্রেণীভুক্ত শিল্পী। সেই সাথে ২০০৪ সাল থেকে সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তালিকাভুক্ত। ১৯৮৫ সাল থেকে দেশ ও দেশের বাইরে সঙ্গীত পরিবেশন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। বর্তমানে নজরুল ইন্সটিটিউটে নিয়মিত নজরুল সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, সেই সাথে নজরুল ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে দেশের সমস্ত জেলাতে নজরুল সম্মেলন ও কর্মশালা আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন।আনসার ও ভিডিপি হেডকোয়ার্টারের সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গীত প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তাছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন নজরুল সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেছেন। এছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত শিক্ষক হিসেবে প্রশ্নপত্র তৈরি, খাতা দেখা ও ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ করে আসছেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত আছেন।
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, সাহিত্যিক, ও সংগীতজ্ঞ। তাকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়, কারণ তার রচনায় বিদ্রোহের সুর প্রবলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন বাংলা সংগীত জগতের এক অনন্য প্রতিভা। কাজী নজরুল ইসলামের সংগীত জীবন শুরু হয় তার শৈশবেই। তরুণ বয়সে তিনি বিভিন্ন যাত্রা ও পালাগানের দলে কাজ করতেন, যা তার সংগীত চর্চার ভিত্তি তৈরি করে। পরে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও বাংলা লোকসংগীতের সঙ্গে পরিচিত হন এবং সংগীত রচনায় দক্ষতা অর্জন করেন। নজরুলের সংগীত, যা নজরুল সংগীত নামে পরিচিত, বাংলা গানের জগতে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। তার গানগুলোতে প্রেম, বিরহ, প্রকৃতি, ভক্তি, দেশপ্রেম ও বিদ্রোহের অনুভূতি প্রকাশ পায়। তিনি প্রথম বাঙালি সংগীতজ্ঞ, যিনি পশ্চিমা সংগীতের সঙ্গে বাংলা গানের মিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন এক ধারা তৈরি করেন। নজরুল ইসলামী সংগীত রচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার লেখা হামদ, নাত ও গজল বাংলা সংগীত জগতে নতুন মাত্রা যোগ করে। তিনি বাংলায় প্রথমবারের মতো ইসলামি গানের প্রচলন ঘটান এবং এসব গানের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে আধ্যাত্মিক অনুভূতি জাগ্রত করেন।
নজরুল হিন্দু ভক্তিমূলক সংগীতেও অসামান্য অবদান রাখেন। তার রচিত শ্যামা সংগীত ও কীর্তন বাংলা সংগীত জগতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। দেবী কালী, কৃষ্ণ ও রাধাকে নিয়ে তার রচিত গান আজও ভক্তিমূলক সংগীতে সমাদৃত। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রচিত তার গান ও কবিতার মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনাকে উজ্জীবিত করেন। তার গানগুলো মানুষকে সংগ্রামের পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে। 'চল্ চল্ চল্', 'কারার ঐ লৌহ কপাট' প্রভৃতি গান আজও দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে সমাদৃত।কাজী নজরুল ইসলামের সংগীত জীবন বাংলা সংগীত জগতে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তার গানের বৈচিত্র্য, গভীরতা এবং শক্তিশালী বার্তা বাংলা সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছে। বিদ্রোহ, প্রেম, ভক্তি ও মানবতার মেলবন্ধনে তার গান আজও মানুষের হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছে।